বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বাংলায় যে বাংলাভাষা সে–ভাবে মর্যাদা পায় না, সেই অভিযোগ অনেকবারই উঠেছে। এবার সেই একই অভিযোগ শোনা যাচ্ছে এফএম রেডিও চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে। সেখানে বাংলা গান প্রায় বাজানোই হয় না। অধিকাংশ সময়ই তারস্বরে বাজানো হয় হিন্দিগান। এমনকী, রেডিও জকিরা বাঙালি হলেও হিন্দিতেই কথা বলতে বেশি যেন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শুধু তাই নয়, অনেকে আবার বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে অদ্ভুত এক জগাখিচুড়ি ভাষায় কথা বলে থাকেন। তাঁরা হয়তো ভাবেন, তাঁদের সেইসব কথা শুনে শ্রোতারা ধন্য হয়ে যাচ্ছেন। সত্যি কথা বলতে কী, অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সেই খিচুড়ি ভাষায় কথা বলা জকিদের সার্কাসের ক্লাউনের মতোই মনে করেন তাঁরা। কিন্তু জকিদের সে ব্যাপারে হেলদোল নেই। তাঁরা হিন্দি ও বাংলাভাষায় কথা বলেই চলেছেন।
এক ভিডিও বার্তায় বিষয়টি নিয়ে এবার সোচ্চার হলেন গায়ক রূপঙ্কর। তিনি বলেছেন, ‘অনেকদিন ধরে আমি দেখছি, বাংলার এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোতে হিন্দি গানই বাজানো হচ্ছে। এমনকী, সব থেকে বড় কথা, এখানকার সঞ্চালকরাও বাংলায় কথা বলেন না। তাঁরা হিন্দিতেই কথা বলেন। হিন্দিভাষাতেই শোগুলি পরিচালনা করে থাকেন।’ রূপঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি হিন্দিভাষার বিরোধী নন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি হিন্দি গান শোনেন। তবে পশ্চিমবাংলায় শুধু হিন্দি গানই বাজানো হবে, বাংলা গান বাজানো হবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি পরিষ্কার বলেছেন, ‘আমাদের গানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ এবং অতুলনীয়। এত মণিমাণিক্যে ভরা বাংলা গানের ভাণ্ডার থেকে কেন গান বাজানো হবে না?’ তিনি জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের ইংরেজি মাধ্যমে পড়তে থাকা অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা কী শিখবে? তাদের কাছে এফএম–ই বাংলা গানগুলিকে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারে। তা তারা নিচ্ছে না, বরং তাদের তারা হিন্দি গানের প্রতিই অনুরক্ত করে তুলতে চাইছে।
তবে রূপঙ্করই প্রথম নন। এর আগে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন জনপ্রিয় বাংলা ব্যান্ড ‘ভূমি’র অন্যতম সদস্য গায়ক সৌমিত্র রায়। এফএম রেডিও চ্যানেলগুলি কেন বাংলা গান বাজায় না, সেই যুক্তি কিছুতেই খুঁজে পাননি তিনি। রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন রেডিও জকিদের আচরণেও। এ ছাড়া সঙ্গীত শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘অধিকাংশ এফএম রেডিও চ্যানেলই বাংলা গান বাজায় না। আমরা ফোন করে চ্যানেলগুলির কাছে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। চ্যানেলগুলির তরফে জানানো হয়েছে, তাদের মালিক পক্ষ নাকি বাংলা গান বাজাতে নিষেধ করেছেন। আমি অনুরোধ করছি, বাংলা গান তাঁরা বাজান। কারণ, বাংলা গান যথেষ্ট সমৃদ্ধ।’ চ্যানেল মালিকদের বাংলা গান বাজাতে নিষেধ করার কথা শুনে অনেকেই বিস্মিত। বাংলা থেকে সম্প্রচারিত চ্যানেলগুলিতে কোন সাহসে মালিক পক্ষ বাংলা গান বাজাতে মানা করেন, সেই প্রশ্নও অনেকেই তুলেছেন।
শিল্পী ইন্দ্রজিৎ দে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘বাংলা গান এফএম–এ ভালো করে চলে, তা হলে তা প্রমোশন হবেই। শুধু প্রমোশনই নয়, আপনারা সেই গানগুলি শুনে বুঝতে পারবেন, গানটা ভালো, নাকি খারাপ! বেশি দিন আগে নয়, এখনকার বিখ্যাত রূপঙ্কর, ফসিলস ব্যান্ডের গানও রেডিও–তে বাজত।’ অন্যদিকে, ‘ক্যালকাটা ক্রুজ’ ব্যান্ডের শিল্পী ইমন সেন তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন এফএম রেডিও চ্যানেলগুলিকে। তিনি বলেছেন, ‘এই চ্যানেলগুলো বাঙালি শিল্পীদের সঙ্গে বেইমানি করছে।’ এই অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রতিটি বাঙালিকেই সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এখন দেখার শিল্পীদের প্রতিবাদ এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর কানে কতটুকু পৌঁছয়!